বোধোদয়
আজ জীবনের ২৬টি বসন্ত পাড়ি দিয়ে এই সুন্দর জান্নাত সম স্থানে এসে যখন
দাঁড়ালাম। তখন সত্যিই মনে হলো জীবনকে আমি উপভোগ করিনি। আমি শুধু দৌড়ে গেছি, ছুটে গেছি অবিরাম। জীবনকে আমি অনুভব করিনি। জীবন এতো সুন্দর হতে পারে
তা আমার ধারণার বাইরে ছিলো। খোদার তৈরি দুনিয়ায় এতো রঙ, এতো রূপ,
এতো
আনন্দ, এতো হাসি, এতো আশা - তা এই সুন্দর পরিবেশ এ না এলে
বুঝতেই পারতাম না।
এ এক মুক্ত পরিবেশ। এখানে আসা মানুষগুলো সবাই মুক্ত, সবাই স্বাধীন। এখানে কারো চোখে কোনো
ভয় নেই, নেই উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। নেই কপালে দুঃশ্চিন্তার কুঁচকানো ভাঁজ। এখানে তারা শুধুই হাসে। তাদের প্রাণোচ্ছল হাসির ঢেউ আমার তৃষ্ণার্ত মনের শুষ্ক বেলা
ভূমিকেও ভিজিয়ে দিয়ে যায়। এক জান্নাতি প্রশান্তি অনুভব করি আমি। তাদের প্রশান্তির হাসি আমি চেয়ে চেয়ে দেখি। কতো মুক্ত তারা, কতো স্বাধীন তারা।
আমার আফসোস হয়, যদি আমিও তাদের
মতো এমনি করে হাসতে পারতাম। এমনি করে তাদের মতো জীবনকে অনুভব করতে পারতাম। পারতাম
প্রতিটি মুহূর্ত বাঁচার মতো বাঁচতে!
কিন্তু
জানি, সে চাওয়াটা এখন আর সম্ভব
নয়। সময় যে অনেকটা গড়িয়েছে।
তারুণ্যের প্রাণোচ্ছল সময়গুলো গেছে অকাজে, অরণ্যে রোদন করে। প্রতিযোগীতায় ছুটে
চলা ঘোড়ার মতো আমাকে ছুটিয়ে দিয়েছিলো হৃদয়হীন পরিবার, মূর্খ সমাজ আর জঙ্ঘন্য নিয়ম-কানুনের
বেড়াজাল। আমি শুধু মরিচিকার পেছনেই ছুটেছি। যখন ভ্রম কাটলো, তখন দেখলাম জীবনের সূর্য
অস্ত যেতে খুব বেশি নেই দেরি। অথচ এই দুনিয়ার রূপ-রস-গন্ধ কিছুই আস্বাদন করিনি আমি।
তাই আমি এখানে এসে এই হাস্যোজ্জল তরুণদের প্রাণ ভরে দেখি। হৃদয় ভরে তাদের তারুণ্যের
শিখার ওম নেই। মনে মনে তাদের বলি, “আমি যেভাবে আমার জীবনে মরিচিকার পেছনে ছুটেছি। তোমরা তেমনি ভাবে মরিচিকার পেছনে
ছুটে নিজেদের শেষ করে দিও না। তোমরা বাঁচো, প্রাণ খুলে বাঁচো। যাতে জীবন সায়াহ্নে আমার
মতো আক্ষেপ নিয়ে বিদায় নিতে না হয়।”