ধর্ম ছাড়া সংস্কৃতির কোনো অস্তিত্ব থাকে কি?
সংস্কৃতি কি – এই প্রশ্নটা যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তবে সবচেয়ে সহজ ভাষায় বলা যায় যে, কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে যা যা করে তাই সেই নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনগণের সংস্কৃতি। যেসব উপাদান কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোনো সংস্কৃতি গড়ে উঠতে সাহায্য করে, সেসব উপাদানের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী একটি উপাদান হলো ‘সেই অঞ্চলের জনগণের বৃহৎ অংশের বিশ্বাস’ তথা ‘ধর্ম’। বলা যায় ধর্ম হলো মানুষের জীবনাচারের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাবক।
কোনো একটি সমাজের মানুষের মাঝে জন্ম থেকেই ভালো-মন্দ, ঠিক-বেঠিকের ধারণা থাকে না। নৈতিকতার ধারণা তার মাঝে অনুপস্থিত থাকে। এই ‘ভালো-মন্দ’, ‘ঠিক-বেঠিক’ ও ‘নৈতিকতার’ ধারণা ব্যাক্তি পায় পরিবার ও সমাজ থেকে। আর পরিবার ও সমাজ এই নৈতিকতার ধারণা নেয় ধর্ম থেকে। শুধু নৈতিকতাই না, একটি অঞ্চলের ভাষা, শিল্প-সাহিত্য, অর্থনীতি, রাজনীতি – এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে ধর্মের প্রভাব নেই। এক কথায় আমরা বলতে পারি, কোনো একটি অঞ্চলের ধর্মই সেখানকার সংস্কৃতি গড়ে ওঠার সর্বাধিক শক্তিশালী প্রভাবক।
অথচ বাংলাদেশের জ্ঞানপাপী সেক্যুলার-লিবারেল ভন্ডরা সব সময় ধর্মকে সংস্কৃতি থেকে আলাদা করতে চায়। তারা চায় তথাকথিত সেক্যুলার ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি ও সমাজ। অথচ ধর্মকে সংস্কৃতি থেকে আলাদা করলে সংস্কৃতি বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্বই থাকে না। কারণ ধর্মই কোনো সংস্কৃতি গড়ে উঠতে এবং সংস্কৃতির আচার ও নীতি-নৈতিকতা গঠনে সর্বাধিক ভূমিকা রাখে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের বাংলাদেশের বাঙালীরাও বাঙালী আর পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীরাও বাঙালী। অথচ দুই যায়গার বাঙালীদের সংস্কৃতি, ভাষা, পোষাক ও জীবনাচারে আকাশ-পাতাল তফাৎ। সেটা কেনো? উত্তর একটাই, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীরা ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে হিন্দু। তাই তাদের সংস্কৃতিতে, তাদের জীবনাচারে, তাদের পোষাকে, প্রথায় ও বিশ্বাসে হিন্দুধর্মের প্রভাব রয়েছে। তাদের সংস্কৃতিতে পালন করা প্রতিটা প্রথাতেই ধর্মের যোগসূত্র পাবেন। তেমনি ভাবে তাদের ভাষাতেও রয়েছে হিন্দুধর্মের প্রভাব। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষায় সংস্কৃত, হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি শব্দের প্রাধাণ্য বেশি। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়বে সংস্কৃতের প্রাধাণ্য যা হিন্দুধর্মের ধর্মগ্রন্থের ভাষা।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বাঙালীরা ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে মুসলিম হওয়াতে তাদের সংস্কৃতিতে ইসলাম ধর্মের প্রভাব দেখতে পাবেন। বাংলাদেশের বাঙালী মুসলিমের দৈনন্দিন জীবনাচার ইসলাম ধর্মের মূলনীতি সমূহকে কেন্দ্রকরেই আবর্তিত হয়। এখানের আনন্দ-উৎসবের মাঝেও ইসলাম ধর্মের প্রভাব দেখতে পাবেন। ইসলামের সাথে অন্যান্য ধর্মের পার্থক্য হলো অন্য ধর্মগুলো শুধুই ধর্ম; অর্থাৎ আচার এর সমষ্টি। আর ইসলাম হলো একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যাবস্থা; এখানে ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সকল বিষয়ে স্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে। এই সকল বিষয় পূর্ণাঙ্গ ভাবে মেনে চলা ব্যাক্তিই মুসলিম। আমাদের বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু মুসলিম তাই এখানের সংস্কৃতিও গড়ে উঠেছে ইসলামের মূলনীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েই। এমনকি বাংলাদেশের বাংলা ভাষাতেও ইসলামের প্রভাব দৃশ্যমান; যেমন বাংলাদেশের বাংলায় আরবী, উর্দু, ফার্সি, তুর্কি শব্দের প্রভাব রয়েছে।
সুতরাং যেসব মূর্খরা বলে
যে ‘সেক্যুলার ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি চাই’ তারা আসলে সংস্কৃতি কি, কোনো প্রভাবকের প্রভাবে
সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, সংস্কৃতি গড়ে ওঠার প্রকৃয়া – এসব কিছুই এরা জানে না। এরা শুধু গাধার
মতো কলকাতার দাদাবাবুদের শিখিয়ে দেয়া বুলিই মুখস্তের মতো আওড়ে যায়। বুঝার মতো, বিশ্লেষণ
করার মতো ঘিলু এদের নেই।