পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স: ভয়ংকর এক ইরাকী খুনে বাহিনীর গল্প


বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম আলোচিত স্থান হলো মধ্যপ্রাচ্য। বিভিন্ন কারণে যায়গাটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় বিশ্বের প্রায় সব পরাশক্তিগুলো। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দুই উদিয়মান প্রভাবশালী পরষ্পর বিরোধী শক্তি সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্ব, ও তাদের প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিত্ররাষ্ট্র সমূহের হস্তক্ষেপ এর কারণে সর্বদাই যুদ্ধবিগ্রহ, অস্থিতিশীলতা, গোলযোগ – এর কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে প্রক্সিওয়ার এর কেন্দ্রস্থলে পরিনত হয়েছে এই যায়গাটি। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধরা হয় ইরাককে। মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও আরববিশ্বের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করার কারণে এই যায়গাটি কৌশলগত ভাবে বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির নিশানায় রয়েছে। তাছাড়া এই দেশটিতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ ও তেলের বিশাল খনি। তাই মধ্য প্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ এই দেশটির নিয়ন্ত্রণ সবাই নিজের কাছে রাখছে চায়।

সমস্যার শুরু যেখান থেকে

ইরাক সব সময় অস্থিতিশীল থাকলেও সাদ্দাম হোসাইনের আরব স্যোসালিস্ট বাথ পার্টির শাসনামলের শুরুদিকে বেশ ভালোই ছিলো। যদিও তখন ইরাকে শুধু মাত্র বাথপার্টি ক্ষমতায় ছিলো ও শাসন ক্ষমতায় ছিলো সাদ্দাম হোসাইন, তবে রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা ছিলো। ইরাক সে সময়কার মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিলো ও মধ্যপ্রাচ্যের উদীয়মান পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। বাথ পার্টি ও সাদ্দাম হোসাইন মিলে রাষ্ট্র ব্যাবস্থা সুসংহত করণ, নিজেদের সামরিক শক্তিবৃদ্ধি, শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্ধ বৃদ্ধি সহ ইরাককে সমৃদ্ধ করার এক বৃহৎ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো। সাদ্দাম হোসাইন সে সময় অন্যান্য আরব জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ্বের মতো অবৈধ রাষ্ট্র ইজরায়েলের কট্টর বিরোধী ছিলো এবং ইরজরায়েলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আরব শক্তির একাধিক যুদ্ধে ইরাক অংশ নিয়েছিলো।

তাই ইরাকের এমন শক্তি বৃদ্ধি ছিলো জায়োনিস্ট ইজরায়েলের জন্য মাথা ব্যাথার কারণ। তাছাড়া সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী বিভিন্ন শক্তিগুলোও ইরাকের এই স্বনির্ভরতাকে এবং উদীয়মান এই শক্তিকে অঙ্কুরেই বিনষ্ঠ করার প্ল্যান প্রস্তুত করতে থাকে। এই প্ল্যান বাস্তবায়নে তারা প্রথম সক্ষম হয় যখন তারা ইরাককে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লাগিয়ে দিতে পেরেছিলো।

মূলত ১৯৭৯ সালে ইরানে কথিত ইসলামিক বিপ্লবের নামে শিয়া বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভীকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে আয়াতুল্লা খামেনির নেতৃত্বাধীন কথিত ইসলামি বিপ্লবী সরকার। এর মধ্য দিয়ে মূলত ইরানে পশ্চিমা ও মার্কিন নিয়ন্ত্রণের অবসান হয় এবং ইরান একটি প্রকৃত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রথম বারের মতো কোনো নিয়ন্ত্রণ মুক্ত ভাবে নিজেদের রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করে। যেটি মোটেও পশ্চিমা ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ভালো চোখে দেখছিলো না। তারা এই সময় একটি সুযোগ পেয়ে যায় ইরাকের সাথে ইরানের “শাত-ইল-আরব” নদ নিয়ে সীমান্ত বিরোধ ও সীমান্ত সংঘর্ষ হয় এবং ইরাকের অভ্যন্তরে খামেনির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উগ্র শিয়া সন্ত্রাসবাদী বিভিন্ন সংঘঠন নানা নাশকতা মূল কাজ চালাতে থাকে। তখন সাদ্দাম হোসাইন এক প্রকার বাধ্য হয়ে ইরানে আক্রমণ করে বসেন। তবে ধারণা করা হয় যে এর পেছনে পশ্চিমা ও মার্কিন নানা কুটচাল ছিলো। ৭ বছর ১০ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে কোনো পক্ষই বিজয়ী হতে না পারলেও ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয় উভয় পক্ষেরই। পরে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে এই যুদ্ধ বন্ধ হয়। এই যুদ্ধে ইরাকের ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ও সামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাছাড়া ইরাকের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মূলত শিয়া। এই যুদ্ধের ফলে শিয়ারা সাদ্দামের বিরুদ্ধে চলে যায়।

পরবর্তীতে সাদ্দাম কুয়েত আক্রমণ করে দখল করে নেয়। এরপর আমেরিকার নেতৃত্বে জাতিসংঘের মোড়কে আমেরিকা ও তার মিত্ররা কুয়েত আক্রমণ করে তা পুনরুদ্ধার করে। এতে ইরাকী বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এটি বিশ্ব ইতিহাসে Gulf War বা উপসাগরীয় যুদ্ধ নামে খ্যাত। এতে ইরাক ব্যাপক সামরিক ও অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই সময়ই আমেরিকা ইরাকের বিপক্ষে Mass Destructing Weapon বা ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র রাখার অভিযোগ আনে। তারা অভিযোগ করে যে ইরাক ব্যাপক পরিমাণে পারমানবিক অস্ত্রের মজুদ করেছে। কিন্তু জাতিসংঘের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন প্রতিনিধিদল ইরাকে অনুসন্ধান চালিয়ে এই অভিযোগের কোনো সত্যতা পায় নি।

এই মিথ্যে অভিযোগের উপর ভিত্তি করেই আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করে। এই আক্রমণে সম্মতি ছিলো না বৃটেনের। কিন্তু আমেরিকা বৃটেনকে বলে যে যুদ্ধ পরবর্তী সম্পদের যে লুটপাট হবে ইরাক থেকে এতে বৃটেন এর কোনোই অংশ থাকবে না। তাই লোভে পরে বৃটেন ইরাক আক্রমণে সমর্থন দেয়। এক সময় প্রায় সব মার্কিন মিত্ররাই ইরাক আক্রমণে সমর্থন দেয়।

আমেরিকার নেতৃত্বে ইরাকে আক্রমণ হয়। এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে থাকে সাদ্দাম হোসাইনের নেতৃত্বাধীন ইরাকী সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীগুলো। এই সময় ইরান ও ইরান সমর্থিত ইরাকের অভ্যন্তরীণ শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীগুলো ইরাকের বিরুদ্ধে অপারেশনে অংশ নেয়। অন্যদিকে মার্কিন ও ইজরায়েল সমর্থিত কুর্দিশ বাহিনী, যাদের উপর এক সময় বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকান্ডের জন্য সাদ্দাম হোসাইন দমন-পীড়ন চালিয়েছিলো, তারাও অপারেশনে অংশ নেয়। অন্যদিকে মার্কিন সমর্থিত আরব রাষ্ট্রগুলো তো আছেই। বহুমূখী আক্রমণে বাগদাদের পতন ঘটে ও সাদ্দাম হোসাইন আত্মগোপনে যায়। তিনি তখন জনগণের জন্য অস্ত্রাগার উন্মুক্ত করে দেন ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গণযুদ্ধের ডাক দেন। সাধারণ মানুষ নিজ মাতৃভূমির প্রতিরক্ষার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেয় এবং বিভিন্ন মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এর মধ্যে যেমন Islamic Army of Iraq, Army of the Man of Nakshbandi Order এর মতো সুন্নী মিলিশিয়া বাহিনীগুলো ছিলো, ঠিক একইভাবে Badr Organization, Madi Army, Kataib Hizbullah Al Nuzaba, Kataib Hizbullah এর মতো শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীগুলোও ছিলো।

যেখানে সুন্নী মিলিশিয়া ও বাথ পার্টির মিলিশিয়া বাহিনীগুলোর আক্রমণের লক্ষবস্তু ছিলো দখলদার বাহিনী, সেখানে শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী গুলোর লক্ষবস্তু ছিলো ভিন্ন। তারা একই সাথে মার্কিন বাহিনীকেও আক্রমণের লক্ষবস্তু বানায়, অন্যদিকে সুন্নী ও বাথ পার্টির বাহিনীগুলো এবং ইরাকী সেনাবাহিনীকেও আক্রমণের লক্ষে পরিণত করে। এক পর্যায়ে শিয়া নেতৃবৃন্দের সাথে আমেরিকার গোপন নেগোসিয়েশনের ভিত্তিতে তারা মার্কিন বাহিনীর উপর আক্রমণ কমিয়ে আনে এবং ইরাকী সেনাবাহিনী ও সুন্নী প্রতিরোধ বাহিনীগুলোর উপর আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে আমেরিকার পুরো ইরাকের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সহজ হয়। এক পর্যায়ে আমেরিকা বাগদাদে নিজেদের পুতুল সরকার ও আমেরিকা অনুগত এক পুতুল সেনাবাহিনী তৈরিতে সমর্থ হয়। ততোদিনে সাদ্দাম হোসাইন ও ধরা পড়ে যান ও তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এরপরও ইরাকী সাবেক সেনাবাহিনীর বিরাট অংশ এবং সুন্নী ও বাথ মিলিশিয়ারা বহুদিনধরে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এক সময় এই প্রতিরোধ স্তিমিত হয়ে গেলেও একেবারে নিভে যায় নি। এখনো ধিকিধিকি ভাবে তা জ্বলছে।

এই দানবের জন্ম যেভাবে

ইরান এবং শিয়া মিলিশিয়ারা চাচ্ছিলো ইরাকে সুন্নী ও বাথপার্টি শাসনের অবসান এবং তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইরাকেও ইরানের আদলে একটি কট্টর শিয়া সরকার বসাতে। এই জন্য তাদের একটি অংশ প্রথমে আমেরিকার সাথে নেগোসিয়েশন করে এবং নবগঠিত পুতুল সরকার ও পুতুল সেনা বাহিনীতে নিজেদের অংশিদারিত্ব নিশ্চিত করে। অন্যদিকে শিয়াদের আরেকটি অংশ চাচ্ছিলো আমেরিকার সাথে নেগোসিয়েশন করে নয় বরং আমেরিকাকে হটিয়েই ইরাককে পূর্ণ শিয়া শাসনের অধীনে আনা। এর মধ্য দিকে খামেনির পুরো মুসলিম বিশ্বব্যাপী একক শিয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কিছুটা হলেও এগোবে। দ্বিতীয় অংশটি তাই ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যায় আমেরিকার বিরুদ্ধে অন্যদিকে তারা বিভিন্ন যায়গায় সুন্নী প্রতিরোধ বাহিনীগুলোকে আক্রমণ ও সাধারণ সুন্নীদের উপর ব্যাপক নির্যাতন ও গণহত্যা চালিয়ে যেতে থাকে।

পরে ২০১৩ সালের পর সকল শিয়া মিলিশিয়া সংগঠনগুলো ও ইরাক সরকারের মধ্যে একটি নেগোসিয়েশন হয়। যেহেতু ইরাক সরকার বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের অনুগত এসব মিলিশিয়া বাহিনী গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যার্থ, তাই তারা নেগোসিয়েশন এর মাধ্যমে সব মিলিশিয়া বাহিনীগুলোকে নিয়ে আলাদা একটি বাহিনী গড়ে তুলে যার নাম Popular Mobilization Force (PMF) বা Popular Mobilization Unit (PMU)। প্রায় ৬৭ টি শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীকে একত্রিত করে এই বাহিনী গঠিত হয়। সাংবিধানিক ভাবে পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স এর প্রধাণ ইরাকী প্রধাণমন্ত্রী। তবে কার্যত সেটা নামে মাত্র। মিলিশিয়া বাহিনীগুলোর নিজস্ব নাম ও পতাকা রয়েছে। প্রত্যেকটা মিলিশিয়া বাহিনীর নিজস্ব নেতা রয়েছে। তারা নিজের নেতার প্রতিই অনুগত। তারা ইরাকি প্রধাণমন্ত্রীকে থোরাই কেয়ার করে।

প্রত্যেকটা মিলিশিয়া বাহিনী পুরো ইরাক ব্যাপী যা মনে চায় তাই করে বেড়ায়। নিজের ইচ্ছা মতো অপারেশন চালায় বিভিন্ন এলাকায়। এর জন্য তারা নিজের নেতা বাদে কাউকে জবাবদিহি করে না। ইরানের অর্থায়নে তারা এতোটাই শক্তিশালী হয়েছে যে ইরাকের সেনাবাহিনী পর্যন্ত তাদের রাশ টেনে ধরতে ভয় পায়। তাদের নির্মম অত্যাচারের স্বীকার ইরাকের সাধারণ সুন্নী জনগণ। বিভিন্ন সময় আইএস দমনের নাম করে বিভিন্ন সুন্নী এলাকায় রাতের আঁধারে অপারেশন চালানো, সুন্নী যুবকদের ধরে নিয়ে যাওয়া ও হত্যা করা, সুন্নী বাড়ি-ঘরে হামলা ও অত্যাচার, নারীদের ধর্ষণ করা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ইরানের অর্থায়নে এসব বাহিনী এখন দানবের রূপ ধারণ করেছে। ইরাকের শিয়া নিয়ন্ত্রিত সরকার কৌশলে এসব বাহিনীগুলোর অপকর্মগুলোকে লুকায়। তারপরও বিভিন্ন সময় এদের অপকর্ম বিভিন্ন আন্তঃর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়ে যায়। প্রায় সময়ই ইরাকের সাধারণ সুন্নী জনগণ বিভিন্ন আরব সুন্নী রাষ্ট্র সমূহের লাইভ টিভি প্রোগ্রাম গুলোতে ফোন দিয়ে তাদেরকে এসব অত্যাচার থেকে রক্ষার আকুতি জানায়। এমন একটি ফোন কলের ভিডিও রেকর্ড দেখলাম কাল। এরপর থ হয়ে বসেছিলাম। আহা, সেই অচেনা নির্যাতিত মানুষটির বাঁচার আকুতি যেনো এখনো আমার কানে বাজছে।

আড়ালে তার ইরান হাসে

মূলত সাদ্দাম হোসাইনের সময় থেকেই Bdr Organization, Mahdi Army সহ ইরান সমর্থিত অসংখ্য শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপ গুলো সক্রিয় ছিলো। তারা কখনোই সাদ্দামের বাথপার্টি সরকারকে সুনজরে দেখেনি। এর প্রধাণ কারণ ছিলো সাদ্দাম হোসেন ও তার সরকারের অধিকাংশ ব্যাক্তিই ছিলেন ইরাকের সুন্নী প্রধাণ অঞ্চলগুলো থেকে আসা সুন্নী রাজনীতিবিদ। যদিও বাথপার্টি কোনো সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল ছিলো না; তারা ছিলো সেক্যুলার। তবে ইরানী শিয়ারা চুরান্ত পর্যায়ের উগ্র সাম্প্রদায়িক হওয়ার কারণে সব সময় সাদ্দাম সরকারের বিরোধীতা করেছে। ১৯৯১ ও ১৯৯৯ সালে তারা বড় ধরণের বিদ্রোহ করে যা সাদ্দাম সরকার সফল ভাবে মোকাবিলা করে সব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের চুরান্ত শাস্তি দেয়। তবে ইরান সব সময়ই নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা ইরাকের অভ্যন্তরে শিয়া প্রধাণ অঞ্চলগুলোতে একেরপর এক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিলিশিয়া গ্রুপ গড়ে তোলে।

সাদ্দাম সরকার পতন পরবর্তী সময়ে ইরানের অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণে গড়ে ওঠে অসংখ্য শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপ। উক্ত মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর কাজ হলো সাধারণ সুন্নী ইরাকীদের উপর গণহত্যা চালানো, গুম করা, নারীদের ধর্ষণ করা। সুন্নীরা যাতে ইরাকে রাজনীতি না করতে পারে এবং তারা যাতে ক্ষমতায় যেতে না পারে তা নিশ্চিত করাই এসব মিলিশিয়া বাহিনীগুলোর কাজ। ইরাকী পুলিশ ও সেনা বাহিনীও এদের কাছে অসহায়। শুধু মাত্র ইরাকেই সংখ্যালঘু সুন্নী জনগোষ্ঠীর উপর মানবাধিকার লঙ্ঘন এর মাঝে তারা নিজেদের কাজকে সীমাবদ্ধ রাখে নি। পার্শবর্তী বিভিন্ন দেশে ইরানের হয়ে গুন্ডামি করাই এদের কাজ। যেমন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে স্বৈরাচারী আসাদের দানব বাহিনীকে সমর্থন দেয়ার জন্য ইরান পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সকে পাঠিয়েছিলো। শুধু মাত্র ইরাকই না, সিরিয়ার লাখো সাধারণ নিরীহ মুক্তিকামী মানুষের রক্তও এদের হাতে লেগে আছে।

এই ভয়ংকর খুনিদের হাত থেকে রক্ষার উপায় কি?

এদের হাত থেকে শুধু ইরাকই নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের কোনো সুন্নী দেশ বা কোনো সুন্নী জনগোষ্ঠীই নিরাপদ নয়। তাই এদের হাত থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় হলো সকল সুন্নী দেশগুলোকে একসাথে হয়ে একটি সংস্থা গঠন করা, যার মূল লক্ষ্য হবে পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের মতো ইরান সমর্থিত খুনি বাহিনীগুলোকে প্রতিহত করা। একদিনে এদের দ্বারা সংগঠিত নৃশংসতার ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণাদি যোগাড় করে অন্তঃর্জাতিক পরিমন্ডলে তা তুলে ধরা।

তাছাড়া ইরান ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র সমূহকে এসব বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন ভূখন্ডে বসবাসরত সুন্নী জনগোষ্ঠীকে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা যাতে তারা এসব খুনে বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। কারণ অন্তঃর্জাতিক আইন অনুযায়ী যেকোনো রাষ্ট্রের যেকোনো নাগরিকের নিজেদের জীবন রক্ষার অধিকার রয়েছে।

Popular posts from this blog

Water Terrorism of India: A New Weapon to Kill Bangladeshi People

Delete Social Media Apps from Your Phone and Enjoy Your Life

How much Bangladeshi people hate Sheikh Mujib